বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ০১:১৬ পূর্বাহ্ন
নোটিশ :
বাংলাদেশের মুখপত্রে আপনাকে স্বাগতম।
শিরোনাম :
আসছে সাগর-জ্যাকলিন জুটির ‘কী প্রেমে জড়ালে’ শ্রীনগরে মোবাইল কোর্ট করে নগদ ২ লক্ষ টাকা জরিমানা ও ২ জনকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড  মান্দায় ৯ বছরের শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে আটক ১ শ্রীনগরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমিতে ঘর নির্মাণের চেষ্টা ঠাকুরগাঁও জেলা প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক উপর বর্বর ও পরিকল্পিত হামলার ঘটনা  আওয়ামীলীগ নোতাকে নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন শ্রীনগরে জমি সংক্রান্ত বিরোধেরে জেরে প্রবাসী পরিবারকে হয়রানি মূলক মামলা ও হামলার হুমকির   অভিযোগ  ব্রাহ্মণপাড়ায় আব্দুল মতিন খসরু মহিলা ডিগ্রী কলেজ ও মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী কলেজের এইচ, এস, সি পরীক্ষারর্থীদের বিদায় মুরাদনগরে সন্ত্রাসীদের হুমকিতে অবরুদ্ধ একটি পরিবার প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

টিকা নিয়ে করোনা হলে তৈরি হচ্ছে ‌সুপার ইমিউনিটি

বাংলাদেশের মুখপত্র ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২১

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দুই ডোজ টিকা নিয়েও করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর যেন সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন ঘটনায় অনেকেই দুশ্চিন্তায় ভুগলেও গবেষণা বলছে, এটি তাদের জন্য অনেকটা সৌভাগ্যের বিষয়। বুস্টার ডোজ না নিলেও দারুণ সুরক্ষা মিলবে তাদের, এমনটাই বলছে গবেষণা। একে সুপার ইমিউনিটি বলে অভিহিত করেছেন গবেষকরা।

করোনা বিষয়ক গবেষক দলের প্রধান এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক মঙ্গলবার ঢাকা পোস্টকে এমন তথ্য দিয়েছেন।

তিনি বলেন, টিকা নেওয়ার পর অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে তাদের শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, তা অন্যদের তুলনায় অনেকাংশে বেশি। এমনকি এই অ্যান্টিবডি কমতে থাকার পরিবর্তে ক্রমান্বয়ে আরও বেড়েছে। যা অনায়াসেই কোনো ব্যক্তিকে এক বছর বা তারও অধিক সময় সুরক্ষা দিতে পারে। একে আমরা বলে থাকি সুপার ইমিউনিটি। একদিকে টিকা নেওয়ার কারণে তার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, অন্যদিকে করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণে আবারও অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।

 কোনো ব্যক্তি টিকা নেওয়ার আগে করোনা আক্রান্ত হলে তার শরীরে অনেক বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। অর্থাৎ, টিকা নেওয়ার আগে যদি কেউ করোনা আক্রান্ত হন, সেক্ষেত্রে টিকা নেওয়ার পরে তার যে ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, সেটি একজন সুস্থ মানুষের নেওয়া টিকায় তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডির চেয়ে পরিমাণে অনেক বেশি।

আশরাফুল হক বলেন, টিকা নেওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এমন অনেককেই আমরা পেয়েছি। তাদের মধ্যে যারা এমআরএনএ (ফাইজার, মর্ডানা) টিকা নিয়েছিলেন, তাদের শরীরে অ্যান্টিবডির মাত্রা ১৮ বা তারচেয়ে বেশি। যেখানে অন্যান্য টিকায় বিশেষত, অ্যাস্ট্রাজেনেকার ক্ষেত্রে সাধারণত অ্যান্টিবডির মাত্রা সর্বোচ্চ ১২/১৪ পর্যন্ত পাওয়া যায়।

করোনায় মৃতদের ২০ শতাংশই টিকা নিয়েছিলেন : স্বাস্থ্য অধিদফতর

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, দেশে করোনা সংক্রমণের ৫০তম এপিডেমিওলজিকাল সপ্তাহে (১৩-১৯ ডিসেম্বর) করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী। তাদের মধ্যে ১৬ জন অর্থাৎ শতকরা ৮০ ভাগ করোনা ভাইরাসের টিকা নেননি এবং বাকি চারজন দুই ডোজ করে টিকা নিয়েছিলেন।

টিকা নেওয়ার পরও করোনায় হওয়ার ঘটনা সারা বিশ্বেই ঘটছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরেও ভারতে প্রায় ২৫ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই আবার উপসর্গহীন।

এমআরএনএ টিকায় সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিবডি

ডা. আশরাফুল হকের নেতৃত্বে ঢাকা মেডিকেলের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী, শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. হোসাইন ইমাম প্রমুখ করোনা টিকার বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করেন।

এ সময় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউট ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা নেওয়া প্রায় এক হাজার মানুষের ওপর গবেষণা চালানো হয়। এরমধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোভিশিল্ডের আট শতাধিক, সিনোফার্মের শতাধিক এবং মর্ডানা ও ফাইজারের টিকা নেওয়া ৪০ জন করে মোট ৮০ জনের ওপরে এই গবেষণা করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ডা. আশরাফুল হক বলেন, সুপার অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার মাত্রা নির্ভর করে তিনি কোন ধরনের টিকা নিয়েছেন তার ওপর। দেখা যাচ্ছে, এমআরএনএ টিকা নেওয়াদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরির প্রবণতা অন্যগুলোর তুলনায় বেশি। আর ভেক্টর (কোভিশিল্ড) ও ভেরোসেলের (সিনোফার্ম) টিকার তুলনায় এমআরএনএ টিকায় সুরক্ষা বেশি।

সুস্থ অবস্থায় টিকা নেওয়ার চেয়ে করোনা থেকে সেরে ওঠে টিকা নিলে সুরক্ষা বেশি

করোনা বিষয়ক এই গবেষক আরও বলেন, কোনো ব্যক্তি টিকা নেওয়ার আগে করোনা আক্রান্ত হলে তার শরীরে অনেক বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। অর্থাৎ, টিকা নেওয়ার আগে যদি কেউ করোনা আক্রান্ত হন, সেক্ষেত্রে টিকা নেওয়ার পরে তার যে ধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, সেটি একজন সুস্থ মানুষের নেওয়া টিকায় তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডির চেয়ে পরিমাণে অনেক বেশি।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, একদিকে করোনা সংক্রমণের কারণে তার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে টিকা নেওয়ার ফলে তার আরও অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। এটিকে আমরা বলি হাইব্রিড অ্যান্টিবডি। এই অ্যান্টিবডি করোনা আক্রান্তের পর টিকা নেওয়া ব্যক্তিকে সবচেয়ে বেশি সুরক্ষা দেয়।

আক্রান্ত ব্যক্তির চেয়ে টিকা নেওয়া ব্যক্তির অ্যান্টিবডির স্থায়িত্ব বেশি

গবেষণায় দেখা গেছে, একজন ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডির তুলনায় টিকা নেওয়ার পর তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডির কার্যকারিতা ও স্থায়িত্ব অনেক বেশি।

পরবর্তীতে করোনার যেকোনো ভ্যারিয়েন্ট এলে ওই ব্যক্তি আবারও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। কিন্তু টিকা নেওয়ার পর শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তাতে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশেই কম।

এ বিষয়ে ডা. আশরাফুল বলেন, আক্রান্ত হওয়ার ফলে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি খুব বেশি দিন কাজ করে না। এর স্থায়িত্ব খুবই কম, তিন মাসের বেশি স্থায়ী হওয়ার সুযোগ আমরা দেখি না। যে কারণে পরবর্তীতে করোনার যেকোনো ভ্যারিয়েন্ট এলে ওই ব্যক্তি আবারও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। কিন্তু টিকা নেওয়ার পর শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তাতে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশেই কম।

যাদের শরীরে সুপার ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে তাদের বুস্টার ডোজের প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে এই গবেষক বলেন, শরীরে তৈরি হওয়া চার ধরনের অ্যান্টিবডির মধ্যে সুপার অ্যান্টিবডি দীর্ঘ মাত্রা ও মেয়াদে থাকার লক্ষণ মিলেছে। যারা টিকা নেওয়ার পরে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তারা বরং আশ্বস্ত থাকতে পারেন। তাদের শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, তাতে এই মুহূর্তে তৃতীয় ডোজ (বুস্টার) নিতে কিছুটা দেরি হলেও তিনি অন্যদের তুলনায় অনেকটাই বেশি সুরক্ষিত রয়েছেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর