স্টাফ রিপোর্টার:
– যেকোনো সময় পালাবেন দেশ ছেড়ে
– দুর্নীতির দায়ে ছাড়পত্র দেয়নি পূর্ববর্তী কর্মস্থল থেকে
– আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত একাধিক বিতর্কিত ব্যাক্তিকে আশ্রয় দিয়েছে এনআরবি!
বিমা আইন লঙ্ঘন, আর্থিক অনিয়মে জড়িত ফারইস্ট মামলার আসামি সৈয়দ আবদুল আজিজকে আশ্রয় দিয়েছে বিমা কোম্পানি এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স। সৈয়দ আব্দুল আজিজ ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) এবং কোম্পানি সেক্রেটারি ছিলেন। বর্তমানে তিনি এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্সে কোম্পানি সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে আর্থিক কেলেঙ্কারির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আর্থিক অনিয়মের অপরাধে কোম্পানির বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নামে মামলাও হয়েছে, তার মধ্যে সৈয়দ আবদুল আজিজ অন্যতম। ওই মামলার আসামিদের মধ্যে অনেকে আইনের আওতায় আসলেও অদৃশ্য শক্তির বলে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছেন তিনি। আর্থিক অনিয়মে জড়িত থাকায় ছাড়পত্র পাননি পূর্ববর্তী কর্মস্থল ফারইস্ট ইসলামী লাইফ থেকে। তিনি ছাড়পত্র ছাড়াই চাকরি করছেন এনআরবি ইসলামিক লাইফে যা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর নিয়ম পরিপন্থি।
জানা গেছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সৈয়দ আবদুল আজিজ দেশ ছেড়ে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এনআরবি লাইফের একটি বিশ্বস্ত সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে ইতোপূর্বে সরকারের বিশেষ একটি বাহিনী তুলেও নিয়ে যায় তাকে। তবে অদৃশ্য কারণে সে যাত্রাও ছাড়া পেয়ে যান তিনি।
এদিকে, দুর্নীতিবাজদের বিমা শিল্পে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দেশের আলোচিত সমালোচিত একটি কেলেঙ্কারিতে জড়িত এই ব্যক্তিকে চাকরি দিয়ে বড় দুর্নীতির সুযোগ দেয়া হয়েছে কিনা তা যাচাই করে দেখা দরকার। এটা না করা হলে অন্যান্য দুর্নীতিবাজরাও সুযোগ পেতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
ফারইস্টের সিইও আপেল মাহমুদ স্বাক্ষরিত গেলো জুলাই মাসের এক তারিখে আইডিআরএতে পাঠানো ওই চিঠি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আবদুল আজিজ ফারইস্টের দেনা পাওনা পরিশোধ না করেই এনআরবিতে যোগদান করে এবং আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয় সেই চিঠিতে। যার মামলা নং- (০৭/২০২৩, ০৮/২০২৩)।
আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকায় আজিজসহ ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। রাজধানীর শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, সাবেক পরিচালক এম এ খালেক ও খালেকের ছেলে রুবায়েত খালেদকে গ্রেপ্তারও করা হয়। অদৃশ্য কারণে আইনের আওতায় আসেননি আবদুল আজিজ।
ভুয়া নথিপত্র তৈরি করে কোম্পানির ৯৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের সহকারী পরিচালক বায়েজিদুর রহমান খান ও সহকারী পরিচালক শরীফা ইসলাম বাদী হয়ে ওই মামলা দুটি দায়ের করেন।
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিটির সাবেক পরিচালক ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান শাররিয়ার খালেদ, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেমায়েদ উল্যাহসহ আরও ছয় পরিচালকের বিরুদ্ধে ৭০ কোটি ৮৩ লাখ ৬৯ হাজার ৪৩৯ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে দুদকে সহকারী পরিচালক বায়েজিদুর রহমান খান মামলা দায়ের করেন।
এই মামলায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্সে কোম্পানির সাবেক সেক্রেটারি সৈয়দ আব্দুল আজিজসহ সাবেক যে ছয় পরিচালককে আসামি করা হয়েছে তারা হলেন— কে এম খালেদ, এম এ খালেক, মো. মিজানুর রহমান, ফরিদ উদ্দিন এফসিএ, আসাদ খান। দ্বিতীয় মামলাটিতে ২২ কোটি ৫৭ লাখ ৭৯ হাজার ৩৭৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইন্সুরেন্স কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, সাবেক পরিচালক ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান শাররিয়ার খালেদ, ফারইস্টের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেমায়েদ উল্যাহ ও সাবেক পরিচালক কে এম খালেদকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার এজাহারে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আসামিরা পারস্পরিক যোগসাজশে ভুয়া নথিপত্র তৈরি করে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড থেকে ৯৩ লাখ ৪১ কোটি ৪৮ হাজার ৮১৩ টাকা আত্মসাৎ এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে উক্ত অর্থ বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যক্তির হিসাবে স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপনপূর্বক পাচার করেন। দুষ্কর্মে সহায়তা ও অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯, ১০৯ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এরা ৪(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।
আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকায় সৈয়দ আবদুল আজিজকে ছাড়পত্র দেয়নি পূর্ববর্তী কর্মস্থল ফারইস্ট ইসলামী লাইফ। এই ছাড়পত্র ছাড়াই ফারিস্ট মামলার আসামিকে চাকরি দিয়েছে এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড- যা নিয়মের পরিপন্থি। ছাড়পত্র না নিয়ে এনআরবিতে যোগদানের বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সিইও আপেল মাহমুদ।
শুধু আজিজ নয় বিভিন্ন কোম্পানিতে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত একাধিক বিতর্কিত ব্যাক্তিকে আশ্রয় দিয়েছে এনআরবি লাইফ।
এনআরবি ইসলামী লাইফের কোম্পানি সেক্রেটারি সৈয়দ আবদুল আজিজকে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের কোম্পানির দেয়া চিঠির ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে, তিনি ‘দোয়া মিলাদে আছেন’ বলে ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এই বিষয়ে জানতে চেয়ে এনআরবি ইসলামী লাইফের সিইও শাহ জামাল হাওলাদারকে একাধিক বার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
দেশের বাইরে অবস্থান করায় এ বিষয়ে এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান কিবরিয়া গোলাম মোহাম্মদের মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি।