ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদুল্লাহিয়ান বলেছেন, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের পরিপূর্ণ অবসান ঘটিয়ে ও সব ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে সেখানে ফিরিয়ে এনে গণভোটের মাধ্যমে সেখানকার রাষ্ট্রের প্রকৃতি ঠিক করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি সরকার গঠন করা ছাড়া ফিলিস্তিনে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
আবদুল্লাহিয়ান মুসলমানদের প্রথম কিবলা আলআকসা মসজিদের পরিচয় মুছে ফেলার লক্ষ্যে পরিচালিত ইসরাইলের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোকে ইহুদিবাদী মহলের স্থায়ী বা অব্যাহত অসৎ নীতির অন্যতম প্রকাশ্য প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ভাষায় এসবের নিন্দা জানান। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, পবিত্র ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাসহ অন্যান্য ঐশী ধর্ম ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রেরণা নিয়ে ফিলিস্তিনিদের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখাকে ইরান তার পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম প্রধান বা মৌলিক স্তম্ভ বলে মনে করে।
ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের দখলদারিত্বের পূর্ণাঙ্গ অবসানের মাধ্যমে পশ্চিম এশিয়ায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার প্রতি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর গুরুত্ব আরোপ ফিলিস্তিন ইস্যুতে তেহরানের আদর্শবাদী বা ন্যায়বিচারকামী নীতিরই প্রকাশ।
১৯৪৮ সালে অবৈধ ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর ৭৫ বছর পার হয়ে গেছে। এই দীর্ঘ ৭৫ বছরে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের আগ্রাসী নীতির কারণে এ অঞ্চলে বেশ কয়েকটি বড় বড় যুদ্ধ হয়েছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠী কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর দমন-পীড়ন এবং পৈতৃক ভূমি থেকে তাদের বিতাড়ন করাকে ইসরাইলের প্রধান কর্মসূচি হিসেবে বাস্তবায়ন করে চলেছে এবং প্রায়ই তারা এ বিষয়ে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এ বিষয়ে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর স্থায়ী ও ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনি জনগণের উপর কঠোর দমনপীড়ন চালিয়ে তাদের ওপর চাপ জোরদার করা, তাদের বাড়িঘর ও ক্ষেত-খামার দখল করা এবং ফিলিস্তিনিদের তাদের বসবাসের এলাকা থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা, যেমন সাম্প্রতিক সময়ে পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জাররাহ এলাকা থেকে তাদেরকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করার চেষ্টা করা হয়েছিল।
এছাড়া তেল আবিব শাসকগোষ্ঠী দীর্ঘকাল গাজা উপত্যকার ওপর সর্বাত্মক অবরোধ দিয়ে রেখেছে এবং এই অঞ্চলে বারবার হামলা চালিয়ে গাজার জনগণের ওপর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি জনবহুল অঞ্চলগুলো থেকে ইহুদিবাদীদের অবৈধ বসতিগুলিকে পৃথক করার জন্য পশ্চিম তীরে প্রাচীর বা দেয়াল তৈরি করার মাধ্যমে ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠী অধিকৃত ফিলিস্তিনে বর্ণবাদী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে।
মূলত ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর প্রতি পশ্চিমাদের প্রত্যক্ষ ও অন্ধ সমর্থনে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নানা পদক্ষেপে ইসরাইল এসব কর্মকাণ্ড চালাতে আসকারা পাচ্ছে। ওয়াশিংটন কেবল ইসরায়েলি গোষ্ঠীর প্রতি সামরিক ও অর্থনৈতিক সমর্থনই নয় বিভিন্ন সময়ে তেল আবিবের বিরুদ্ধে কার্যকর আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ ঠেকাতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভেটোও দিয়ে আসছে।
এই পরিস্থিতির কারণে ফিলিস্তিনি জনগণ বারবার ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর দমনমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ‘ইন্তিফাদা’- গণঅভ্যুত্থান ও গণজাগরণ গড়ে তুলেছে এবং একই সঙ্গে হামাস ও ইসলামিক জিহাদের মতো ফিলিস্তিনি জিহাদি আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করে ইহুদিবাদীদের বিরুদ্ধে সুসংগঠিত সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামও গড়ে তুলেছে। আর দিনকেদিন এ প্রতিরোধ সংগ্রাম জোরদার ও কার্যকর হয়ে উঠছে।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের পরিপূর্ণ অবসান ঘটিয়ে ও সব ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে সেখানে ফিরিয়ে এনে গণভোটের মাধ্যমে সেখানকার রাষ্ট্রের প্রকৃতি ঠিক করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি সরকার গঠন সংক্রান্ত ইসলামী ইরানের প্রস্তাব ও পররাষ্ট্র নীতি প্রায়ই ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোর প্রশংসা পেয়ে আসছে।