বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ০১:৪০ পূর্বাহ্ন
নোটিশ :
বাংলাদেশের মুখপত্রে আপনাকে স্বাগতম।
শিরোনাম :
শ্রীনগরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমিতে ঘর নির্মাণের চেষ্টা ঠাকুরগাঁও জেলা প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক উপর বর্বর ও পরিকল্পিত হামলার ঘটনা  আওয়ামীলীগ নোতাকে নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন শ্রীনগরে জমি সংক্রান্ত বিরোধেরে জেরে প্রবাসী পরিবারকে হয়রানি মূলক মামলা ও হামলার হুমকির   অভিযোগ  ব্রাহ্মণপাড়ায় আব্দুল মতিন খসরু মহিলা ডিগ্রী কলেজ ও মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী কলেজের এইচ, এস, সি পরীক্ষারর্থীদের বিদায় মুরাদনগরে সন্ত্রাসীদের হুমকিতে অবরুদ্ধ একটি পরিবার প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ পানিতে ডুবে বাবা-মেয়ের মৃত্যু নৈঃশব্দ্যের নিমগ্ন ডুব— ঈশিতা ইমু মানবতার বিরুদ্ধে ইসরায়েল এর হামলা ১১৭ ফিলিস্তিনি নিহত

বিদেশফেরত ও নারীকর্মীদের জন্য আসছে ‘বিশেষ ঋণ’

বাংলাদেশের মুখপত্র ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২১

নিউজ ডেস্কঃ  মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরত এসেছেন অনেক কর্মী। তাদের জন্য ‘আত্মকর্মসংস্থানমূলক ঋণ’ নামের একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান ব্যাংক। একই সঙ্গে নারীকর্মীদের জন্য নেওয়া হয়েছে ‘নারী উদ্যোক্তা কর্মসংস্থান ঋণ’। আগামী মাসের শুরুতে অর্থাৎ ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে প্রকল্প ও ঋণ দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদের জন্য ৫০০ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা প্রকল্পের ঘোষণা দেওয়া হয়। সেখান থেকে ২৫০ কোটি টাকা বিদেশফেরত কর্মীদের সহায়তার জন্য ‘আত্মকর্মসংস্থানমূলক ঋণ’নামক নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।এ প্রকল্প থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীরা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে সুদের হার হবে ৪ শতাংশ। মেয়াদ হবে দুই বছর। তবে, ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে।

বিদেশফেরত কর্মীদের সহায়তার জন্য ২৫০ কোটি টাকার ‘আত্মকর্মসংস্থানমূলক ঋণ’ নামক নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্প থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীরা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। এছাড়া বিদেশগামী ও ফেরত নারীকর্মীদের জন্য চালু হচ্ছে ‘নারী উদ্যোক্তা কর্মসংস্থান ঋণ’

শর্ত হচ্ছে, কোভিড ফেরত কর্মীকে অবশ্যই দেশে থাকা এবং ব্যবসা করার মানসিকতা থাকতে হবে।

অন্যদিকে, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে বিদেশগামী নারীকর্মীদের জন্য চালু করা হচ্ছে ‘নারী উদ্যোক্তা কর্মসংস্থান ঋণ’। প্রকল্পটি চলমান থাকবে। ওয়ার্কিং ভিসাধারী নারীকর্মীরা এখান থেকে ঋণ নিতে পাবেন। মূলত, বিদেশফেরত নারীদের পুনর্বাসনের জন্য এ ঋণ প্রকল্প চালু করা হচ্ছে।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘করোনায় বিদেশফেরত কর্মীদের জন্য ২৫০ কোটি টাকার ঋণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে এ অর্থ আমাদের হাতে এসেছে। চার শতাংশ সুদে এ অর্থ আমরা করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদেশফেরত কর্মীদের মধ্যে বিতরণ করব। ঋণটা হবে দুই বছর মেয়াদি। প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘আত্মকর্মসংস্থানমূলক ঋণ’।

ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে— উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, মূলত করোনার কারণে বিদেশফেরত ও ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের স্বাবলম্বী করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে বিদেশে ছিলেন কিন্তু কোভিডের কারণে দেশে ফেরত এসেছেন, তাদেরও এ ঋণের আওতায় আনা হয়েছে। ঋণ পেতে কিছু শর্ত পরিপালন করতে হবে। যেমন- অবশ্যই তাকে বিদেশফেরত (করোনার কারণে) কর্মী হতে হবে। দেশে থাকা এবং ব্যবসা করার মানসিকতা থাকতে হবে। আত্মকর্মসংস্থানের জন্য, হতে পারে সেটা কোনো ছোট গ্রোসারি শপ বা মুদি দোকান, পোল্ট্রি বা মৎস্য খামার— এ ধরনের প্রকল্পের জন্য এ ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে।

সর্বোচ্চ কত টাকা ঋণ এবং কতজনের মধ্যে এ অর্থ বিতরণ করা হবে— জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘২৫০ কোটি টাকা কতজনের মধ্যে বিতরণ করা যাবে, সেটা তো এখনই বলা যাচ্ছে না। তহবিল যতক্ষণ থাকবে আমরা দিতে পারব। একেক জনের চাহিদা একেক রকম হবে। তবে, সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হবে।’

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সব শাখা থেকে এ ঋণ বিতরণ করা হবে। এক্ষেত্রে বিদেশফেরত কর্মীদের কোভিডের সময় ফেরত আসার প্রমাণ, পাসপোর্টসহ সীমিত কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে— বলেন তিনি।

‘নারী উদ্যোক্তা কর্মসংস্থান ঋণ’ প্রসঙ্গে ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘নারীকর্মীদের জন্য যে প্রকল্পটি আমরা চালু করতে যাচ্ছি, এটি ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নে হবে। নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। বিদেশগামী যেসব নারী আছেন তারা এখান থেকে সহজ শর্তে ঋণ নিতে পারবেন। যারা বিদেশফেরত তারাও ঋণ নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে তাকে ভিসাধারী ওয়ার্কার হতে হবে।

কোভিডের কারণে দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছেন, অথবা এর আগে বা পরে যেকোনো সময়; আত্মকর্মসংস্থানের জন্য তিনি ঋণ নিতে পারবেন। প্রকল্পটির নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। এটি চলতে থাকবে। এমনও হতে পারে ২০ বছর পর্যন্ত প্রকল্পটি চলতে পারে।

‘আত্মকর্মসংস্থানমূলক ঋণ’ প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. জাহিদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার কারণে বিদেশফেরত প্রবাসীদের সহায়তার জন্য সরকার ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করে। সেখান থেকে শুরুতে অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের ২৫০ কোটি টাকা দেয়। সেই অর্থ প্রবাসীদের মধ্যে ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ২৫০ কোটি টাকাও আমরা পেয়েছি। এ টাকা বিতরণের ক্ষেত্রে সরকার কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে।

‘শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘কোভিডের কারণে বিদেশফেরত কর্মীদের আত্মকর্মসংস্থানে এ অর্থ ব্যয় করা যাবে। একজন কর্মীকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া যাবে। ঋণের হার হবে চার শতাংশ, মেয়াদ দুই বছর। অর্থাৎ যারা ঋণ নেবেন তাদের ১৮ কিস্তিতে সমুদয় টাকা ফেরত দিতে হবে।’

‘নারী উদ্যোক্তা কর্মসংস্থান ঋণ’ প্রসঙ্গে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘কাজের জন্য যেসব নারী দেশের বাইরে যাচ্ছেন তারাও উদ্যোক্তা। তারাও এখান থেকে ঋণ পাবেন। আর যারা দেশে ফেরত এসেছেন, দেশেই কিছু করতে চান কিন্তু পুঁজি নেই তাদের ঋণ দেওয়া হবে। প্রাথমিক অবস্থায় ইক্যুইটি পার্টিসিপেশন ছাড়াই সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হবে। এক লাখের ওপরে হলে ইক্যুইটি পার্টিসিপেশন লাগবে।’

প্রসঙ্গত, করোনার কারণে বিদেশফেরত ও দেশে আটকাপড়া প্রবাসীকর্মীদের পুনর্বাসনে গত বছর ৭০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করে সরকার। ঋণসহায়তা দিতে জুলাইয়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ তহবিলে আরও ৫০০ কোটি টাকা যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যুক্ত হয় ২৫০ কোটি টাকা। বাকি ২৫০ কোটি টাকা করোনার কারণে বিদেশফেরত কর্মীদের আত্মকর্মসংস্থানে ব্যয় করার জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছে।

কোভিডের কারণে দেশে এসেছেন ৪ লাখের অধিক কর্মী

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা কাজ হারিয়ে দেশে ফেরত এসেছেন। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৯টি দেশ থেকে চার লাখ আট হাজার ৪০৮ কর্মী দেশে এসেছেন। তাদের মধ্যে তিন লাখ ৫৮ হাজার ৪৮৪ জন পুরুষ এবং ৫০ হাজার নারীকর্মী।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের তথ্যানুযায়ী, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় পাঁচ লাখ কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন। কোভিডের পর এখন পর্যন্ত তিন লাখের অধিক কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কোভিডের কারণে আমাদের প্রায় পাঁচ লাখের মতো কর্মীকে দেশে ফেরত আসতে হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে অর্থাৎ কোভিডের পর তিন লাখের মতো কর্মী বিদেশে গেছেন। কোভিডের পর যাদের কর্মসংস্থান হয়েছে, তাদের মধ্যে নতুন ও পুরাতনরা রয়েছেন।’

গত ১০ নভেম্বর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ জানান, গত চার মাস তথা জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেড় লাখের বেশি কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর