আদম মালেক : এমরান হোসেন নান্নু লক্ষ্মীপুর সদরের ১ ন. উত্তর হামছাদি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। যদিও সভপতি হওয়ার আগে ঐ কমিটির সদস্যও ছিলেন না। তার বাবা রশিদ চেয়ারম্যান এক সময় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল(জাসদ) এর সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও পরে বিএনপির সাথে সখ্য গড়ে তোলেন। ছোট ভাই ফ্রান্স বিএনপির সদস্য।
বড় ভাই সৌরভ হোসেন বিনু ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর স্মরণ সভা উপলক্ষ্যে আয়োজিত গণভোজের হাড়িতে লাথি মেরে বঙ্গবন্ধু ও তার অনুরাগীদের অপমানিত করেন বলে অভিযোগ করেছেন ১ ন. উত্তর হামছাদি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। তাছাড়া ভেতরে বাইরে থেকে দলের ক্ষতি করা ছাড়াও নান্নু চেয়ারম্যান নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত বলে ক্ষুব্ধ নেতৃবৃন্দ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০০৪ সালের ১৫ আগস্ট লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ১ ন. উত্তর হামছাদি ইউনিয়নের চৌধুরী বাজারে বঙ্গবন্ধু স্মরণ সভা উপলক্ষ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ গণভোজের আয়োজন করে। সেদিন নান্নু চেয়ারম্যানের বড় ভাই সৌরভ হোসেন বিনুর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী গণভোজে বাধা দেয়।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ করলে বিনু গণভোজের হাড়িতে লাথি মারে। তাঁর এ আচরণে আওয়ামী লীগ কর্মীরা নান্নুর দ্বার¯’ হলে তারা নান্নুর কাছ থেকেও কোনো সহযোগিতা পাননি। অথচ ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগে সরকার গঠন করলে নান্নুর ভাই বিনু ভোল পাল্টে ফেলেন। তিনি বনে যান বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারক ও বাহক। জায়গা করে নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের বিরোধীতা করেও এ পরিবারটি আওয়ামী লীগের কাঁধে সওয়ার হয়েছে। তাদের ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগের কমিটিতে অনুপ্রবেশ করেছে বিএনপি সন্ত্রাসীরা। এ পরিবারটি আওয়ামী লীগের সম্পদ নয় বোঝা। তাদের কারণে দুর্দিনের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অবহেলিত।
এসব হাইব্রিড আওয়ামী লীগদের নিয়ে উদ্বিগ্ন দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। দলে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় নেতারা কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা বললেও এসব হাইব্রিড আওয়ামী লীগারের ব্যাপারে উদাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব।
অভিযোগ রয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ নান্নু চেয়ারম্যানের আয় রোজগারের বড় উৎস। টিআর. কাবিখাসহ বিভিন্ন প্রকল্প থেকে বিপুল অংকের অর্থ আত্মসাৎ করেন তিনি ।কোটি কোটি টাকার দেশী বিদেশী বরাদ্দ এলেও সিকিভাগ কাজও করেরনি। বিপুল অংকের আত্মসাৎ করেন। বয়স্ক ভাতা বিধবা বাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতায় তার ঘুষ বাণিজ্য চলে। এসব ভাতার জন্য জন প্রতি ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা আদায় করা হয়।
এদিকে সম্প্রতি এমরান হোসেন নান্নুকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অবৈধ পদদারী বলে লক্ষ্মীপুর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সংবাদ সম্মেলনে মৎস্যজীবী লীগ সম্মেলন প্রতি কমিটির সদস্য শামিম আনোয়ার বা”চু জানান , ২০০৪ সালে ২১ সদস্য বিশিষ্ট উত্তর হামছাদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সভাপতি আলতাফ হোসেন ৪ বছর আগে মারা যান। এ প্রেক্ষিতে জেলা আওয়ামী লীগ ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন।
দ্রæত সম্মেলন করে কমিটি দেওয়ার আশ্বাসে ওই বৈঠকে এমরান হোসেন নান্নুকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ঘোষণা করা হয়। কি না তিনি আওয়ামী লীগের সদস্যও ছিলেন না। গত ৪ বছরেও নতুন কমিটি করার কোন সিদ্ধান্তও হয়নি। উল্টো বিএনপির সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিুত আনার উল্যার ছেলে সুমন হোসেনকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে পাদায়ন করেছেন নান্নু।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করি, হৃদয়ে বঙ্গব›ন্ধু। কি নান্নুর পরিবারটি বিএনপি। তারা কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেনি। নান্নুর প্রয়াত পিতা রশিদ চেয়ারম্যান এক সময় জাসদ করতেন পরে বিএনপির সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন।
ছোট ভাই বিদেশে বিএনপি করেন। বড় ভাই বিনু বঙ্গবন্ধুর স্মরণ সভা উপলক্ষ্যে আয়োজিত গণভোজের হাড়িতে লাথি দেয়। তার এ জঘন্য আচরণ পুরো বাঙ্গালী জাতিকে অপমানিত করে। কিš‘ অপরাধীকে শাস্তি দেয়া হয়নি বরং উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে জায়গা দিয়ে তাকে পুরুস্কৃত করা হয়।
এতে আমরা মর্মাহত। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নান্নু চেয়ারম্যানের আয়ের বড় উৎস। কোটি কোটি টাকার দেশী দেশী বিদেশী সহযোগিতা এলেও নান্নু চেয়ারম্যান সিকিভাগ কাজও করেননি। বিপুল অংকের টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন। বয়স্ক ভাতা বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য জনপ্রতি ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায় আদায় করেন।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল মোল্লা বলেন, নান্নু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার পরিবারের সদস্যরা বিএনপির সঙ্গে জড়িত। ২০০৪ সালে নান্নুর বড় ভাই বিনু, চৌধুরী বাজারে প্রকাশ্যে দিবালোকে অজস্র মানুষের বঙ্গবন্ধুর স্মরণসভা উপলক্ষ্যে আয়োজিত গণভোজের হাড়িতে লাথি মারে। তার ঘৃণ্য কর্ম আজও মানুষের মুখে মুখে। বিনু শাস্তি পাননি বরং দলীয় পদপদবী নিয়ে বহাল তবিয়তেই আছে।
এতে উপেক্ষিত আওয়াম লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। বাবুল মোল্লাও নান্নু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনেছেন। প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ ছাড়াও বয়স্ক ভাতা বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী থেকে এই চেয়ারম্যান মাথা পিছু তিন থেকে ৬ হাজার টাকা ঘুষ নেন বলে বাবুল মোল্লা জানান।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ কাদের সিদ্দিকী বলেন, নান্নুর পুরো পরিবার বিএনপি। তারা আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী। তাদের কারণে দুর্দিনের আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা এখন অবহেলিত। তার ভাই বিনু ২০০৪ সালের ১৫ আগস্ট চৌধুরী বাজারে বঙ্গবন্ধুর স্মরণ সভা উপলক্ষ্যে আয়োজিত গণভোজের হাড়িতে লাথি মারে। নান্নুকে সভাপতির পদ থেকে বহিস্কার করে নতুন কমিটি দেওয়ার জন্য
মৌখিকভাবে একাধিকবার আবেদন করেও কোন লাভ হয়নি। পরে সংবাদ সম্মেলন করে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। নান্নু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষ দুর্নীতির মেলা অভিযোগ রয়েছে বলে কাদের সিদ্দীকিও জানান।
এ ব্যাপারে ১ ন. উত্তর হামছাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমরান হোসেন নান্নু বলেন, আমার পরিবারে অনেক আওয়ামী লীগ আছে। আমার মামা আওয়ামী লীগার ছিলেন। তিনি বঙ্গন্ধুর সঙ্গে কারাবরণ করেন। তিনি বলেন, আমার পরিবারে কোনো বিএনপি নেই। আমার বড় ভাই সৌরভ হোসেন বিনুর বিরুদ্ধে ১৫ আগস্ট গণভোজের হাড়িতে লাথি মারার অভিযোগ বানোয়াট। আমার ভাই ছাত্রলীগ করতেন।
পরে যুবলীগে ছিলেন। এখন থানা আওয়ামী লীগের নেতা। তাছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ আমার কমিটির অনুমোদন দিয়েছে। এখানে কোনো অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়নি। এই কমিটিতে কোনো সন্ত্রাসী নেই। তাছাড়া অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন নান্নু চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমার সকল কাজ কর্মে স্ব”ছতা রয়েছে।
সৌরভ হোসেন বিনুর মোবাইুল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।