শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৭:০৭ অপরাহ্ন
নোটিশ :
বাংলাদেশের মুখপত্রে আপনাকে স্বাগতম।
শিরোনাম :
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক উপর বর্বর ও পরিকল্পিত হামলার ঘটনা  আওয়ামীলীগ নোতাকে নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন শ্রীনগরে জমি সংক্রান্ত বিরোধেরে জেরে প্রবাসী পরিবারকে হয়রানি মূলক মামলা ও হামলার হুমকির   অভিযোগ  ব্রাহ্মণপাড়ায় আব্দুল মতিন খসরু মহিলা ডিগ্রী কলেজ ও মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী কলেজের এইচ, এস, সি পরীক্ষারর্থীদের বিদায় মুরাদনগরে সন্ত্রাসীদের হুমকিতে অবরুদ্ধ একটি পরিবার প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ পানিতে ডুবে বাবা-মেয়ের মৃত্যু নৈঃশব্দ্যের নিমগ্ন ডুব— ঈশিতা ইমু মানবতার বিরুদ্ধে ইসরায়েল এর হামলা ১১৭ ফিলিস্তিনি নিহত চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ

উপকূলের সংগ্রামী নারী

বাংলাদেশের মুখপত্র ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২১

নিউজ ডেস্কঃ চরফ্যাশনের চর কুকরী মুকরীর বিলকিস বেগম (২৩), নূরজাহান বেগম (৩৫) কিংবা কুকরির শিরিন আক্তার (২৪)। এরা সবাই পরিবারের প্রধান। চরফ্যাশনের দক্ষিণ উপকূলে মাত্র এই ৩ জনই নয়, অনেক অসহায় নারী রয়েছেন যারা বেঁচে থাকার তাগিদে কাজ করছেন।

কারও স্বামী অসুখে মারা গেছেন, কারও স্বামী ফেলে চলে গেছেন, আবার কারও স্বামী দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত। সংসারের বোঝা নারীর কাঁধে। পরিবারে অভাব অনটন বারোমাস লেগেই রয়েছে। পরিবারের প্রধান দুস্থ-অভাবী নারীদের দুঃখ পিছু ছাড়ে না। এখানে ওখানে চেয়েচিন্তে খাওয়া, ধারকর্জ করে চলা, সাহায্যের জন্য সরকারি বেসরকারি সংস্থায় হাত বাড়ানো তাদের নিত্যসঙ্গী। তবুও আটার রুটি-পায়েস খেয়ে জীবন ধারণ, কখনো অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটানো।

উপকূলে নারীদের-ভাগ্য বিড়ম্বিত জীবনে অবহেলা, বৈষম্য আর নির্যাতনের শিকার নিত্যদিনের, নেই সমাধান। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে স্বামীর অনুপস্থিতিতে সংসারে নারী হয়ে ওঠেন পরিবারের প্রধান। অথচ কোথাও নেই এতটুকু স্বীকৃতি। উপরন্তু আছে যৌতুকের চাপ, তালাকের ভয়। স্বামীর একাধিক বিয়ে শেষ জীবনেও নারীকে দেয় না স্বস্তি। জীবনের রঙিন দিনগুলোর শুরুতেই বাল্যবিয়ের ভোগান্তি চাপে নারীর কাঁধেই। তবুও নারীকে সইতে হয় নানাবিধ গঞ্জনা। দুর্যোগ এলে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি বাড়ে নারীর। লঙ্ঘিত হয় অধিকার। ভয়াল নদীতে মাছ ধরার মতো পেশায় দেখা মেলে উপকূলের নারীর। জীবিকার তাগিদে নদীতে গিয়ে স্বামী ফিরে না এলেও নারীকে নামতে হয় জীবন সংগ্রামে।

কুকরী মুকরীর বিলকিস বেগম। স্বামী বাচ্চু মিয়া ফকির দুই সন্তান জন্মের পর বিনা নোটিশেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। প্রথম স্ত্রী বিউটি বেগম দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত বলে বিলকিসকে বিয়ে করেছিল বাচ্চু মিয়া। কিন্তু বিয়ের পর বিলকিস বেগম জানতে পারেন বিউটি বেগম সুস্থ। একে একে তার কোল আলো করে দুটি সন্তান। ছেলে মান্না আর মেয়ে লামিয়া। এক সময় বাচ্চু মিয়া চলে যান বিলকিসকে ফেলে।

বিলকিস বেগমের মতে, অনটনের মধ্যেও সন্তানদের লেখাপড়া করানোর ইচ্ছা ছিল। অভাবের কারণে ষষ্ঠ শ্রেণির পর ছেলে মান্নার পড়া বন্ধ হয়ে যায়। লামিয়া এখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। তার লেখাপড়াও কতদূর করাতে পারব, কে জানে, রাস্তার পাশে ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরে বাস করছি। অনেক কষ্টে দিন পার করছি।

কুকরী মুকরীর বাবুগঞ্জ লঞ্চঘাটে শিরিন আক্তার স্বামী আর দু’সন্তান নিয়ে বাস করেন। রাস্তার পাশে টং ঘর বানিয়ে একটি দোকান করেছেন। পাশের ছোট্ট ঘরটিতে বসবাস। স্বামী জয়নাল আবেদীন দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত। শিরিনকে এখন শুধু সংসারের বোঝাই বইতে হচ্ছে না, স্বামীর চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে শিরিন আক্তার বলেন, সংসারের সব কাজ করে দোকানদারি করি। চা বানাই তা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করি। দুই মেয়ে স্বর্ণা আর ঝর্ণা ঘরের কাছেই কখনো খেলাধুলা করে, কখনো ঘরে থাকে। দোকানে ক্রেতা সামলাই। এরই ফাঁকে রান্নার আয়োজনও করি। দুস্থ এ নারীদের সংসার চালিয়ে নিতে সরকারি সাহায্য থাকলেও তা পাওয়ার সৌভাগ্য হাতেগোনা কয়েকজনের হয়। এ প্রসঙ্গে কুকরী মুকরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, উপকূল অঞ্চলে নারীদের মধ্যে যারা পরিবারের প্রধান, তাদের অনেকেই দুস্থ, অসহায়। এদের জন্য সরকারি বেসরকারি কিছু প্রকল্প থাকলেও তা একেবারেই অপ্রতুল। সহায়তার পরিমাণ বাড়িয়ে এবং এদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে এদের অবস্থার উন্নয়ন ঘটতে পারে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর