বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ০৭:১৯ পূর্বাহ্ন
নোটিশ :
বাংলাদেশের মুখপত্রে আপনাকে স্বাগতম।
শিরোনাম :
শ্রীনগরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমিতে ঘর নির্মাণের চেষ্টা ঠাকুরগাঁও জেলা প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক উপর বর্বর ও পরিকল্পিত হামলার ঘটনা  আওয়ামীলীগ নোতাকে নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন শ্রীনগরে জমি সংক্রান্ত বিরোধেরে জেরে প্রবাসী পরিবারকে হয়রানি মূলক মামলা ও হামলার হুমকির   অভিযোগ  ব্রাহ্মণপাড়ায় আব্দুল মতিন খসরু মহিলা ডিগ্রী কলেজ ও মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী কলেজের এইচ, এস, সি পরীক্ষারর্থীদের বিদায় মুরাদনগরে সন্ত্রাসীদের হুমকিতে অবরুদ্ধ একটি পরিবার প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ পানিতে ডুবে বাবা-মেয়ের মৃত্যু নৈঃশব্দ্যের নিমগ্ন ডুব— ঈশিতা ইমু মানবতার বিরুদ্ধে ইসরায়েল এর হামলা ১১৭ ফিলিস্তিনি নিহত

নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে বিপদে শিক্ষার্থীরা

বাংলাদেশের মুখপত্র ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২১

 নিউজ ডেস্কঃ চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন ৬০ শিক্ষার্থী। নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ও কর্তৃপক্ষের ওপর আর ভরসা রাখতে না পেরে এখন অন্য মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশন চায় তারা।  

২০১৭-১৮ সেশনে ভর্তি হওয়া এ শিক্ষার্থীরা নানা সমস্যা ও প্রতিকূলতা পেরিয়ে চতুর্থ বর্ষে উত্তীর্ণ হলেও পাচ্ছিলেন না কোনো ক্লাস ও সময় মতো পরীক্ষার সুযোগ। চিকিৎসক না থাকায় রোগীশূন্য হাসপাতালটিতে হাতে-কলমে স্বাস্থ্যশিক্ষা সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করাও সম্ভব হয়ে উঠছে না তাদের।

বারবার কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে সমস্যার সমাধান এবং মানসম্মত শিক্ষার দাবি জানালে তারা আশ্বস্ত করেন যে, দ্রুতই বিএমডিসি ও ঢাকা ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

নিয়ম অনুযায়ী সব সুযোগ-সুবিধা না থাকায় ২০১৭ সালে দেশের ৯টি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ওই সময় কলেজগুলো উচ্চ আদালতে রিট করলে ছয় মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেন আদালত। স্থগিত সময়ে কলেজগুলো শিক্ষার্থী ভর্তি করে।

তাদের মধ্যে কয়েকটি মেডিকেল কলেজ নির্দিষ্ট সময়ে শর্ত পূরণ করে বিএমডিসির তালিকাভুক্ত হলেও চার বছরেও রেজিষ্ট্রেশন পায়নি আশুলিয়ার নাইটিংগেল মেডিকেল।

প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা জানান, উচ্চ আদালতে আবেদন করে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ পেলে ওই সময়ের মধ্যে ২০১৭/১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ভর্তি করে নেয় তারা। হিসেব অনুযায়ী এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষার সময় হলেও, এখন পর্যন্ত নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজ বিএমডিসির অনুমোদন পায়নি।

এ অবস্থায় মেডিকেলটিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে তাদের অভিভাবকদের। তবে নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, সবকিছু নিয়ম মেনেই হচ্ছে।

ইমরান খান ইমন নামের মেডিকেল কলেজটির চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালতের অনুমোদন নিয়ে যেহেতু আমাদের ভর্তি করা হয়েছে, সেহেতু অবশ্যই আমরা প্রতিষ্ঠানটির বৈধ ছাত্র। এ অবস্থায় আমাদের দ্বায়ভার অবশ্যই স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের নেওয়া উচিত। যেহেতু মেডিকেল কলেজটিতে কোনো রোগী নেই, ভালো চিকিৎসক ও শিক্ষক নেই, সেহেতু আমাদের অন্য একটি মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশনের সুযোগ দেওয়া হোক।

তিনি বলেন, আমাদের যদি সুযোগ দেওয়া না হয়, তাহলে ৬০ জন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের পাশাপাশি ৬০টি পরিবারের ভবিষ্যতও অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। দয়া করে আপনারা আমাদের এই অবস্থা থেকে বাঁচান।

নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরসহ ওপর মহলের কর্মকর্তারা বলছেন এটা হাইকোর্টের বিষয়, কিন্তু আমাদের কথা হলো হাইকোর্ট থেকেই স্টে অর্ডার নিয়ে, ছয় মাসের অনুমোদন নিয়েই আমাদের তারা ভর্তি করেছিল। তাহলে আমরা যারা আটকে আছি, সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি না, আমাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে এখানে হাইকোর্টের কী কাজ? অধিদফতর চাইলেই তো একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

তিনি বলেন, যে মেডিকেলের গত চার বছর কোনো অনুমোদন নেই, সেই মেডিকেল বন্ধ করতে তো হাইকোর্টের প্রয়োজন হয় না। যেহেতু মেডিকেল কলেজটিতে শিক্ষার কোনো পরিবেশ নেই, শিক্ষার্থীরাও শিক্ষার কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না, তাহলে তো অধিদফতর মেডিকেল কলেজটি বন্ধ করে দিলেই পারে। আর তাহলে তো আমরা যারা আটকে আছি, তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মাইগ্রেশন পেয়ে যাই।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ২০১৭-১৮ সেশনে জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেখে তারা ওই মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে যান। তখন কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের জানায়, কলেজের অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যার কারণে ২০১৬ সালে তাদের পূর্ববর্তী শিক্ষার্থীরা মাইগ্রেশন করে অন্যত্র চলে গেছে। তারা এটাও বলেছিল আমাদের প্রথম ব্যাচ ধরে কলেজের সব কার্যক্রম নতুনভাবে শুরু করবে এবং তাদের পূর্ববর্তী সকল সমস্যারও সমাধান তারা করেছেন।

 

ক্লাস শুরুর পর প্রথম বর্ষ কোনো সমস্যা ছাড়া কাটলেও দ্বিতীয় বর্ষে শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন ওই কলেজের বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন তো নেই-ই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশনও তখন ছিল না। এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বারবার আশ্বস্ত করেন যে, দ্রুত তারা বিএমডিসি ও ঢাকা ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করবেন।

শিক্ষার্থীরা আরও জানান, প্রথম প্রফেশনাল পরীক্ষার দুইদিন আগে ঢাকা ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রেশন এবং পরীক্ষার আগের রাতে ১০টার পর অ্যাডমিট কার্ড পান তারা।

তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকলেও ফরেনসিক ল্যাবে ইকুয়েপমেন্ট ছিল না, যার ফলে পয়জনের বোতলে পানি নিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল এবং চিকিৎসা সরঞ্জামগুলোও ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের ব্যবস্থা করতে হয়েছে।

তারা জানান, বর্তমানে মেডিসিন ও সার্জারি ডিপার্টমেন্টে কোনো চিকিৎসক নেই। নেই কোনো এনেস্থেসিওলজিস্ট। ফলে কোনো সার্জারিই সম্ভব নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই মেডিকেল কলেজ থেকে স্বাস্থ্যশিক্ষা সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয়।

এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজে ছাত্র ভর্তির বিষয়টি আদালতের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ আদালত থেকে স্টে অর্ডার নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে, এখন আদালতে বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।

অনেকগুলো অনুমোদনহীন মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়, পরবর্তীতে এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা জটিলতায় পড়ে -এ নিয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের ভূমিকা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের জানা মতে অনুমোদনহীন কোনো মেডিকেল কলেজ নেই। তারপরও যদি কোনো শিক্ষার্থী ওইসব মেডিকেলে গিয়ে ভর্তি হয়, তাহলে তো আমাদের কিছুই করার নেই। যেগুলোকেই আমরা অনুমোদন দিয়েছি, সেগুলোকেই আমরা নজরদারি করে থাকি। অনুমোদনের বাইরে গিয়ে যদি কেউ ভর্তি হয়, এটা তো তাদের দায়িত্ব।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তা নূর ইমাম মেহেদী ঢাকা পোস্টকে বলেন, কিছু শিক্ষার্থী আমাদের হাসপাতাল, আমাদের মেডিকেল কলেজ থেকে মাইগ্রেশনের দাবিতে আন্দোলন করছে, আর বাকি সব শিক্ষার্থীই নিয়মিত ক্লাসে অ্যাটেন্ড করছে। আমরা আন্দোলনরতদের সাথে কথা বলেছি, তাদের বলেছি ক্লাসে ফিরে আসার জন্য। কারণ নিবন্ধন নিয়ে আমাদের এখানে কোনো জটিলতা নেই। হাই কোর্টের অনুমোদন নিয়েই তারা আমাদের মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে।

বিএমডিসি সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিএমডিসির অনুমোদন নিয়েই আমাদের মেডিকেল কলেজ যাত্রা শুরু করেছিল। আমাদের মেডিকেল থেকে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি ব্যাচ চিকিৎসক হয়ে বিএমডিসি সনদ নিয়ে সেবা দিচ্ছেন। কিন্তু ২০১৭ সালে স্বাস্থ্য শিক্ষা  অধিদফতর শিক্ষার্থী ভর্তিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিলে আমরা হাইকোর্টের অনুমোদন নিয়ে আবারও ভর্তি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, যাদের আমরা এই সময়ে ভর্তি করেছি তাদের সকল দায় দায়িত্ব আমাদের। তাদের এখনো এমবিবিএস পাস করতে দুই থেকে আড়াই বছর সময় লেগে যাবে। এই সময়ের মধ্যেই সকল সমস্যার সমাধান করে এসব শিক্ষার্থীদের বিএমডিসি সনদ পাওয়ার ব্যবস্থা করবো। এগুলো নিয়ে তো চিন্তা থাকলে আমাদের থাকবে। শিক্ষার্থীরা কেন এসব নিয়ে চিন্তা করবে?

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর