রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪৬ পূর্বাহ্ন
নোটিশ :
বাংলাদেশের মুখপত্রে আপনাকে স্বাগতম।
শিরোনাম :
মান্দায় ৯ বছরের শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে আটক ১ শ্রীনগরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমিতে ঘর নির্মাণের চেষ্টা ঠাকুরগাঁও জেলা প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক উপর বর্বর ও পরিকল্পিত হামলার ঘটনা  আওয়ামীলীগ নোতাকে নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন শ্রীনগরে জমি সংক্রান্ত বিরোধেরে জেরে প্রবাসী পরিবারকে হয়রানি মূলক মামলা ও হামলার হুমকির   অভিযোগ  ব্রাহ্মণপাড়ায় আব্দুল মতিন খসরু মহিলা ডিগ্রী কলেজ ও মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী কলেজের এইচ, এস, সি পরীক্ষারর্থীদের বিদায় মুরাদনগরে সন্ত্রাসীদের হুমকিতে অবরুদ্ধ একটি পরিবার প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ পানিতে ডুবে বাবা-মেয়ের মৃত্যু নৈঃশব্দ্যের নিমগ্ন ডুব— ঈশিতা ইমু

বাংলাদেশ হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠল কেন?

বাংলাদেশের মুখপত্র ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১

প্রথমত : নিউজ হেডলাইনে ‘বেনজীর আহমেদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা’ এমনভাবে বলা হলেও বিষয়টি মোটেও ব্যক্তিগত পর্যায়ের নয়। বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের। যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেটি ব্যক্তি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে নয়, বরং অভিযোগটি র‍্যাবের বিরুদ্ধে আর তারই অংশ হিসেবে র‍্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহেমদ (আইজিপি হিসেবে নয়) সহ র‍্যাবের আরও চার জন অফিসারের ব্যাপারে এই নিষেধাজ্ঞা।

অথচ মিডিয়ায় ঢালাওভাবে বেনজীর আহমেদের নাম দিয়ে শিরোনাম করা হচ্ছে। এটি অবশ্য টিআরপির খেলা। কারণ তিনি যখন যে চেয়ারে ছিলেন সেটি নিয়েই মিডিয়ার আগ্রহ বেশি ছিল। তবে ভাইয়ের জ্যেষ্ঠকন্যা রিশতার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা চলা অবস্থায় তার নাম এভাবে শিরোনামে আনার ব্যাপারটি আমার কাছে ভালো লাগেনি। কারণ অধিকাংশ মানুষ নিউজের বিস্তারিত না পড়ে শুধু শিরোনাম পড়েই চলে যায়।

দ্বিতীয়ত: বাংলাদেশ হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্রের এত মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠলো কেন? প্রকৃতপক্ষে এই করোনা পরিস্থিতিতে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি যেখানে ক্ষতির মুখে পড়েছে সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ভিশনারি ও সাহসী সিদ্ধান্তের ফলে চলমান অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা এবং মাদক ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির মাধ্যমে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিশ্চিত হওয়াই মূলত পশ্চিমা বিশ্বের এত জ্বালার কারণ।

তাই গত ৯-১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘সামিট ফর ডেমোক্রেসি’ তে দাওয়াত পায়নি বাংলাদেশ। আর তারপর আসলো র‍্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং তার ছয় কর্মকর্তার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি।

বিষয়টি নিয়ে হয়তো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় স্টেটমেন্ট দেবে। তবে আমি আমার সামান্য জ্ঞানে কিছু ব্যক্তিগত অবজারভেশন তুলে ধরতে চাই।

র‍্যাব বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর অধীনে থাকা একটি কম্পোজিট ফোর্স। এই বাহিনীর নামেই রয়েছে ‘র‍্যাপিড’ শব্দটি। আর তাই এই বাহিনীর কার্যক্রম কিংবা ম্যান্ডেটেও রয়েছে ভিন্নতা। মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই র‍্যাবের এত শত অভিযান। জঙ্গিবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নেই র‍্যাব তার সর্বশক্তি বিনিয়োগ করেছে এবং অনেকাংশে সফলও হয়েছে।
আমরা মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাই বিভিন্ন দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান কিংবা বিস্তারের ইস্যুতেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের সেনা মোতায়েন করেছে এবং সেসব দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই র‍্যাব তথা বাংলাদেশ পুলিশের দুঃসাহসিক অভিযানে জঙ্গিবাদ হয়েছে ছিন্নভিন্ন। এক কথায় জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন হয়ে গেছে। আর তাই হয়তো এ অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রকার হস্তক্ষেপের সুযোগটি নষ্ট হওয়াতেই তারা আশাহত হয়ে ক্ষেপেছে। মাদকের ব্যাপারটিও অনেকটা সেরকম। যেহেতু মাদক একদম ব্যক্তি পর্যায়ের ইস্যু তাই মাদক শতভাগ নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব নয়। কিন্তু মাদক ব্যবসায়ীদের দমনে র‍্যাব অনেকটাই সফল হয়েছে।

মাদক এবং জঙ্গিবাদ দমনের ফলে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার হয়েছে সুসংহত। অথচ বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্র ব্যাখ্যা করছে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে! হায় সেলুকাস!

যুক্তরাষ্ট্র মূলত বিভিন্ন বন্দুকযুদ্ধে নিহত সন্ত্রাসীদের বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে। আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সমর্থন করি না কারণ প্রতিটি মানুষেরই ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। যে কোনো অপরাধের শাস্তিই আইন ও আদালতের প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। তবে একই সঙ্গে আমার কমনসেন্স দ্বারা আমি এটিও বুঝি জঙ্গিদের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ এসব থাকাটাই স্বাভাবিক এবং র‍্যাব-পুলিশের অভিযানে তারা আত্মসমর্পণ না করে আক্রমণ করলে র‍্যাব-পুলিশও হাত পা গুটিয়ে বসে না থেকে পাল্টা জবাব দেওয়াটাই স্বাভাবিক। আর র‍্যাব-পুলিশ যেহেতু ওয়েল ট্রেইনড এন্ড ওয়েল ইকুইপড তাদের কাছে জঙ্গিরা পরাস্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর এই প্রক্রিয়াতেই হয়তো বেশ কিছু জঙ্গি স্পট ডেড হয়েছে। র‍্যাব-পুলিশেরও কিছু সদস্য আহত-নিহত হয়েছে।

মাদকের ব্যাপারটিও অনেকটা এরকম। বিশেষ করে বেনজীর আহমেদ ভাই যখন ঘোষণা দিলেন ‘হুয়েভার, হোয়াটএভার, হোয়্যারএভার, কেউই আমাদের অপারেশনের বাইরে নন।’ তখন মাদক ব্যবসায়ীরাও তাদের শক্তি বাড়াতে অস্ত্রসস্ত্র সঙ্গে নিয়েই মাদক চালান করা শুরু করল এবং পরিণতিও আগের মতোই হলো।

সবচেয়ে বড় কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আইনের প্রতি চূড়ান্ত শ্রদ্ধাশীল বলেই তার নিজের পিতা-মাতা ও পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিচারটি পর্যন্ত আইনানুগ প্রক্রিয়াতেই সম্পন্ন করেছেন। আমি কনফিডেন্টলি বলতে পারি যিনি তার নিজের পরিবারের ব্যাপারেই আইন লঙ্ঘন করেননি তিনি অন্য ব্যাপারেও আইন কিংবা মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে কাউকে এক বিন্দু ছাড় দিতেন না।

আরে ভাই, এত যুক্তিতর্কের প্রয়োজন হয় নাকি? বেনজীর আহমেদ তো সেই মহৎপ্রাণ যার অনন্য প্রচেষ্টায় সুন্দরবনের জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করে দস্যুতা ছেড়ে ফিরেছে স্বাভাবিক জীবনে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আলোচনা ও সুপারিশের মাধ্যমে এই লোকগুলোকে আইনের কঠিনতা থেকে বাঁচিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর মত কাজ কি মানবতা নয়?

হলি আর্টিজানে যখন জঙ্গিরা এতগুলো মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিল তখন ব্যক্তিগত একটি সোশ্যাল কল ফেলে সবার আগে অন দ্যা স্পটে হাজির হয়ে অভিযানে নিজে অংশ নেওয়া কি মানবতা নয়?

করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি গৃহবন্দি গরীব কর্মহীনদের খাদ্য সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া কি মানবতা নয়?

রাজশাহীর বাঘাতে এক বাগানমালিক যখন তার আমের জন্য শামুকখোল পাখির সব বাসা ভেঙে দিতে উদ্যত হয়েছিল তখন বাগান মালিককে আমের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে পাখিগুলোকে রক্ষা করা কি মানবতা নয়?

করোনায় মারা যাওয়া প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের পরিবারের জন্য ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে খাদ্য, পোশাক ও আর্থিক সহায়তা প্রদান কি মানবতা নয়?

এরকম উদাহরণ লিখতে গেলে শেষ হবে না। আর কয়টা উদাহরণই বা জনসম্মুখে আসে। আমিতো আজ পর্যন্ত দেখলাম না ভাই কখনো তার নিজের কোনো মানবিক কার্যক্রম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।

শেষে একটা কথা বলি। চট্টগ্রামের তালসরা মাজার লুটের ঘটনা, লিমন ইস্যু এবং সর্বোপরি নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডার ইস্যুর পরও বেনজীর দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ র‍্যাবের উপর সর্বোচ্চ আস্থা রেখেছিল। আর র‍্যাবের পুরো কর্মকাণ্ডে তো কত অফিসারই জড়িত ছিল। তবু অন্য সবাইকে বাদ দিয়ে শুধু বেনজীর আর বর্তমান ডিজি মামুন নাম কেন আনা হলো? এগুলো আসলে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকে প্রতিশোধের চেষ্টামাত্র। বেনজীর ডিএমপি কমিশনার থাকা অবস্থায় ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা অবরোধ নস্যাৎ করেছেন, রাস্তায় সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগ ও মানুষ হত্যা বন্ধ করেছেন। স্বাধীনতা ও জনগণের শত্রুদের প্রতিহত করেছেন। তিনি একজন দেশপ্রেমিক। দেশ ও জনগণের কল্যাণের প্রশ্নে তিনি সদা সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। বেনজীর তার অবসরের বয়সসীমায় চলে এসেছেন। তিনি নিজ কর্ম দ্বারা পুলিশ বাহিনীর ইতিহাসে নিজেকে সবচেয়ে ক্যারিশমাটিক অফিসার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এই ক্যারিশমার চাহিদা ও জনপ্রিয়তা এখন বিশ্বব্যাপী। আর এজন্যেই তাঁকে লক্ষ্য করেই শত্রুপক্ষের এতো ষড়যন্ত্র।

তবে বেনজীর আহমেদকে শুধু বলবো- আপনার প্রতি একটাই অনুরোধ, আপনি এসব নিয়ে ভাববেন না। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি কোনো ষড়যন্ত্রেই কোনো কাজ হবে না। কারণ আপনার জন্য পুরো বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের দোয়া ও সমর্থন আছে। আর সেই দোয়াতেই আপনি সবসময় ভালো থাকবেন ইনশাআল্লাহ। আপনার জন্য দোয়া ও শুভকামনা।

নাহিদ উকিল জুয়েল, উপ-গণশিক্ষা সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর