আদম মালেক : নানা নেতিবাচক প্রচারণার কবলে বিমা খাত। তার ওপর ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের সম্প্রতি প্রকাশিত আর্থিক অনিয়মের খবর বিমা খাতের জন্য একটি বড় আঘাত। গ্রাহকরা বিমা দাবি পায় না,তছরুপ হয়েছে তাদের আমানত। এ অভিযোগে ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদ। অপসারিত হয়েছে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। এখানে গ্রাহকের আমানত সুরক্ষিত। তাই বিমা দাবি পরিশোধে কোম্পানিটি এগিয়ে আছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাঈদুল আমিন।
সাইদুল আমিন বলেন,হাটি-হাটি পা-পা করে এ পর্যন্ত এসেছে দেশের বিমা খাত। বেশীরভাগ বিমা কোম্পানীর সুষ্ঠু ও নিয়মান্ত্রিক কার্যক্রমে বিকশিত এ খাত। এতে বিপুল মানুষের কর্মসংস্থান যেমন হয়েছে তেমনি রয়েছে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্ব অবদান। অথচ সম্প্রতি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আর্থিক অনিয়মে বিমা খাতের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই কোম্পানীগুলোর অনিয়মের দায় পুরো খাতকে বহন করতে হচ্ছে।
সাঈদুল আমিন বাংলাদেশেরমুখপত্রডটকমকে বলেন, দেশে নতুন নতুন বিমা কোম্পানীকে নিবন্ধন দেয়া হচ্ছে। এতে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরী হয়। এক কোম্পানীর ব্যবসা আরেক কোম্পানী হাতিয়ে নেয়। তোয়াক্কা করে না জেন্টলম্যান এগ্রিমেন্ট।
অধিক মুনাফার আশায় এক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাকে আরেক প্রতিষ্ঠান বেশী বেতনে নিয়োগ করে। এই বাড়িতে ব্যবস্থাপনা খরচে কোম্পানী লোকসানে পড়ে। বছরের পর বছর ধরে লোকসানের ঘানি টানতে হয়।
তিনি বলেন, কিছু কোম্পানীর পরিচালনা পর্ষদ গ্রাহকের আমানতকে নিজেদের তহবিল মনে করেন। এ কারণে আমানত সুরক্ষা বা বিনিয়োগের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন নয়, যেনতেনভাবে টাকা হাতিয়ে নেয়াই তাদের উদ্দেশ্য। এজন্য মুখথুবড়ে পড়ে কিছু কোম্পানী। বছরের পর বছর ধরে পরিশোধ করতে পারছে না বিমা দাবি। পরচালনা পর্ষদ অসৎ হলে তারা ব্যবস্থাপনা কমিটিকে তাদের অনৈতিক উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নে বাধ্য করে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য কোম্পানীর পরিচালনা পর্ষদের সততা থাকতে হবে। তাহলে ব্যবস্থপনা পরিষদও তেমন অনিয়ম করতে পারবে না। তবে আশার কথা হচ্ছে, আমরা যারা ভালো কাজ করছি, তাদের মাধ্যমে আস্থা ফিরে আসবে। মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স চায় সেবার মধ্যদিয়ে গ্রাহক আস্থা ফিরিয়ে এনে কোটি মানুষকে বীমা পরিবারের সঙ্গে আবদ্ধ করতে।
আলোচনা করেন কোভিডের প্রভাব নিয়ে। এই মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মনে করেন, মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বীমাখাত। বিশেষ করে জীবন বীমা খাত। যে কারণে আমরা এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। তবে চেষ্টা অব্যাহত আছে, করোনার মধ্যেও মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এর বেতনভাতা সুযোগ সুবিধা সচল রাখতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে খরচের তুলনায় ব্যবসা আসেনি। তবে আমরা গ্রাহকের আমানতকে সুরক্ষা দিতে পেরেছি।
প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিতে তাঁর পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ। সাইদুল আমিন বলেন, সম্মিলিতভাবে সবাইকে স্বচ্ছতার দিকে আসতে হবে। কোম্পানীগুলিকেও স্বচ্ছতার জন্য কাজ করতে হবে। আমাদের যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজের জন্য উৎসাহ জরুরী। মানুষের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরে বীমার অগ্রগতির জন্য তৎপরতা অতি প্রয়োজনীয়। আবার যারা মনিটরিং করছে, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের প্রত্যাশা তাদের কাছেও রয়েছে। সম্মিলিতভাবে কাজ করলে স্বচ্ছতা আসবেই। শতভাগ স্বচ্ছতার মধ্যদিয়ে গ্রাহক সেবা দিতে বদ্ধপরিকর মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
দক্ষ জনশক্তির অভাবের কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি সমাধানের দিকেনির্দেশনাও উঠে আসে সাঈদুল আমিনের আলাপচারিতায়। বাংলাদেশেরমুখপত্রটকমকে তিনি আরো বলেন,আস্থার জায়গা ফিরিয়ে আনতে না পারার কারণে গ্রাহকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তেমনি কর্মকর্তা কর্মচারীরাও ভালো সুযোগ সুবিধা পায় না। আর ভালো সুবিধা না পেলে দক্ষ জনশক্তি আসে না। সরকারের বিভিন্ন বিভাগে যে বেতন কাঠামো আছে সেটা যদি আমরা বীমা খাতে প্রয়োগ করতে পারি তাহলে এখানেও দক্ষ জনশক্তির সংযুক্তি ঘটানো সম্ভব।
প্রসঙ্গত তিনি শিক্ষা খাতের গুরুত্ব তুলে ধরেন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্সের ওপর পড়ানো হয়। শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ব্যাংকিংয়ের দিকে। ইন্স্যুরেন্সের প্রতি নয়। এর কারণ হলো ব্যাংকে চাকরি হলে সে ভালো বেতন পায়। আসলে ব্যবসার আকার বড় করতে না পারার কারণে আমরা কর্মীদের ভালো বেতন দিতে পারছি না। ভালো বেতন দিতে না পারলে ভালো কর্মী আশা করা যায় না। এক্ষেত্রে মার্কেন্টাইল পরিবার যেমন একদিকে শিক্ষিত তরুণ সমাজকে বীমা পেশায় সম্পৃক্ত করতে কাজ করছে, তেমনি সমানভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন পেশাগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বীমা খাতে একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলতে।
রাষ্ট্রিয়ভাবে বিমা দিবস পালন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এই বিমা ব্যক্তিত্ব। তিনি মনে করেন, সারাদেশে প্রচারণা বাড়ছে। বিমার প্রতি মানুষের আন্তরিকতা বাড়ছে। সরকারের এ উদ্যোগের কারণে সরকারী-বেসরকারী সকল পর্যায়ের মানুষ সচেতন হচ্ছে।
বিমার ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা থাকবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি বীমার বার্তা পৌঁছানোর জন্য। ঐ জায়গাগুলোতে বীমা বাধ্যতামূলক করে দেয়া দরকার। কিছু জায়গায় কাজ করেছে সরকার। আরও কিছু জায়গায় যদি কাজ করা যায় তাহলে সুফল আরও আসবে।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা চালু হয়েছে। কিন্তু এটা খুব ছোটো পরিসরে। এ বীমা আরও বড় পরিসরে হওয়া দরকার। অভিভাক মারা গেলে টাকার অভাবে বা অন্য কোনো কারণে লেখাপড়া যাতে বন্ধ হয়ে না যায় সে জন্য শিক্ষা বীমা দরকার। উচ্চ শিক্ষার জন্য আমরা ইন্স্যুরেন্স দিতে পারি। শিক্ষার জন্য সে যত উপরে যাবে ইন্স্যুরেন্স থাকলে সে বীমা কোম্পানীর কাছ থেকে তত সহযোগিতা পাবে। আর্থিক সহযোগিত না থাকলে উচ্চ শিক্ষায় অনেকে ঝরে যায়। এখানে আর্থিক বিষয় জড়িত।
এ জায়গাগুলোয় কাজ করা যায়। এছাড়া আমাদের কলকারখানায় যারা কাজ করে যদি তাদের বীমার আওতায় আনা যায় তাহলে তারা সুরক্ষা পারে। বীমা সমৃদ্ধ হবে। সরকারও উপকৃত হবে। সরকার যে রাস্তাঘাট ব্রিজ-কালভার্ট করে সেটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বীমা থাকলে ক্ষতিপূরণ পাবে। তখন সড়কের কাজে বীমা কেম্পানীও নজরদারি করবে যাতে কাজের মান খারাপ না হয়। সেখানে অনেক জায়গায় বীমাকে সম্পৃক্ত করা সম্ভব। এভাবেই দেশের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বীমার প্রতি উৎসাহ ও আন্তুরিকতা রয়েছে- এতো কিছুর পর সুফল কতটুকু পাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ধীরগতিতে হচ্ছে। মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি নানা কারণে। সরকারের চেষ্টা আছে। আন্তরিকতা আছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ পেশায় ছিলেন। তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা আমরা পচ্ছি। কিছু কিছু জায়গায় সমন্বয়হীনতার কারণে পিছিয়ে আছি আমরা। এখানে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, বীমার উন্নয়নে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছে।
সবশেষ তিনি আবারো বললেন, তাঁর নিজ প্রতিষ্ঠান নিয়ে। জানালেন, ‘মানুষের আস্থা, বিশ্বাস আর ভালোবাসায় আগামী সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যেতে চায় মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।’