গ্রামটির নাম সাধনপুর। আঁকা বাঁকা পথ। গ্রামের একটু ভিতরে আনন্দ বাজার সংলগ্ন ছোট্ট একটি কুড়ের ঘর। সেই ঘরে থাকতো এক দুঃখিনী মা,আর তার হাজারো স্বপ্নে মোড়ানো ছোট্ট একটি রাজপুএ ছিল নিখিল ।
নিখিলের বাবা মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্ট করে লালন-পালন করছে নিখিলকে। দুঃখ যে কি তা নিখিল কখনো বুঝেনি। নিখিলের মায়ের মুখে শুনছি,বুঝবেই বা কিভাবে তার চাওয়াটা যাই হতো না কেন, শত কষ্ট হলেও তার মা পূরন করে দিতো। কখনো কিছুর অভাব বুঝতে দেয় নি তার মা। মানুষের বাড়ীতে বাড়ীতে কাজ করে, মাঠে-ঘাটে কাজ করে, এঘর ঐঘর ঘুরে ঘুরে সংসার চালাতেন। তার স্বপ্ন,আশা তার ছেলে পড়ালিখা করে অনেক বড় হবে। অনেক বড় চাকরি করবে।
একদিন অনেক টাকা হবে। তার কষ্টের অবসান ঘটবে। নিখিল পড়ালিখায় অনেক ভালো ছিল। সে গ্রামের স্কুল থেকে ভালো রেজাল্ট করে। নিখিলের মার ভাবনা ছেলেকে বড় করতে হলে বড় কলেজে পড়াতে হবে। নিখিল তার মাকে খুব ভালোবাসতো। ৭১ এ ঘাতক পাঞ্জাবীরা একদিন বাড়িথেকে নিখিলকে ধরে নিয়ে যায়। কয়েক কয়েকদিন কেটে গেল, কিন্তু দুঃখিনী মা নিখিলের কোন খবর পায় না। সে প্রায় পাগলের মত হয়ে গেল। যাকে দেখে তাকেই নিখিলের কথা জিগ্গেস করে, কিন্তু কেউ নিখিলের খবর দিতে পারে না। একদিন শুনলো নিখিল কে তারা মেরে ফেলেছে। দুঃখিনী মা দিন গুনতে গুনতে বৃদ্ধ হয়ে গেল।
তবুও তার আশা তার নিখিল ফিরবে, তার স্বপ্ন পূরন করবে। কিন্তু নিখিলের কি হলো??? নিখিল তো একজন মানুষের মতো মানুষ হতে চেয়েছিলেন!কিন্তু ঘাতকেরা নিখিলের স্বপ্ন পুরণ করতে নেয়নি। পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে নিখিলকে চলে যেতে হল পরপারে। নিখিলের প্রানশূন্য দেহটি এখনো অদৃশ্য । নিখিলের মা এতদিন বসে চেয়ে ছিলেন পথের দিকে , আসবে আমার নিখিল , আমার স্বপ্ন পূরাতে।
নিখিলের মা আজ সকালে শতবর্ষ অতিক্রম করে পরপারে চলে গেলেন। আমরা সবাই শোকাভিভূত। গ্রামের আমজনতা নিখিলের মায়ের আত্মার চির-শান্তি কামনা করেন। পুনঃ -নিখিলের মাকে আমি ছোট্ট থেকেই কালা দি বলে ডাকতাম। ভালো থেকো কালাদি পরপারে
লেখকঃ তাপস কান্তি নন্দী