সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিশেষ প্রতিনিধি সাইফুল্লাহ :
১. আপনার নাম ও ঠিকানা?
মো: জুয়েল।
তবে ফেসবুকে সবাই MD Juwal Haoladar নামে চিনে। গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুর জেলা, থাকি মিরপর পশ্চিম শেওড়াপাড়া।
২. প্রতিষ্ঠানের নাম কি?
উ:অনলাইন প্রতিষ্ঠান।
উ: দোলনা বাড়ি .Hammock.
৩. প্রধান বিক্রয় পন্য ও পাশাপাশি অন্য বিক্রয় পন্যের নাম কি কি?
উ: আমি প্রথমে Hammock দোলনা নিয়ে শুরু করলেও সাথে যোগ হয়েছে Suing Hammock বা চেয়ার দোলনা, Suing Indoor Hammock.
৪. উদ্যোক্তা হিসেবে শুরুর অভিজ্ঞতা?
উ: ২০২০ সালে করনার সময় অফিসের অল্প কাজ থাকায় বেশি সময় বাসায় থাকার সুবাধে বারান্দায় বসলেই প্রায় সময় দেখা যেত আমার থেকে দুই বিল্ডিং পর অন্য এক বিল্ডিংয়ের বারান্দায় একটা বাচ্চা কাঠের দুই মাথায় দড়ি দিয়ে বাঁধা ঝুলন্ত একটি দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে।
ঐ দেখে আমার মাথায় হঠাৎ দোলনা গেঁথে গেল।
কারন আমার বাসার বারান্দায় ছিল বেশ বড়। ভাবলাম এই বারান্দায় একটি দোলনা হলে মন্দ হয় না।
পরেরদিন অফিস থেকে ফেরার পথে দোলনা তৈরি সমস্ত উপকরণ নিয়ে আসলাম।
আমার দোলনা তৈরি হয়ে গেলে বারান্দায় ঝুলানোর কোন ব্যবস্থা না থাকায় একদিন দুষ্টামি করে একটা গ্রুপের পোস্ট দিই দোলনা বিক্রি হবে।
সাথে সাথে একজন দাম জানতে চেয়ে ক্রয় করতে আগ্রহ দেখাল। দরদামে ঠিক হলে পরদিন আমি নিজেই ডেলিভারি করে আসি। টাকা হাতে পেয়ে বেশ অবাক হয়ে মনে মনে নিজকে প্রশ্ন করলাম, আমার দোলনা বিক্রি হলো? মানে খুশিতে বাকবাকুম।
ততদিনে আমার দোলনা তৈরিরত অবস্থায় যে সমস্ত ছবিগুলা আমি ফেসবুকে নিজ আইডিতে পোস্ট করেছি সে ছবি আর কাজ বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে, এবং অনেকেই দোলনা তৈরি করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে যাচ্ছে।
সেই থেকে শুরু হয়ে এখনো চলছে কাজ।
৫. উদ্যোক্তা হিসেবে বাধার সন্মুখীন হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে?
উ: আমি যে দোলনাগুলো তৈরি করেছি তা সম্পূর্ণ আমার নিজের হাতে, এবং মেটারিয়াল বাবদ আমি যে অর্থ খরচ করেছি তার থেকেও কম প্রাইজের ঘোষনা দিয়ে বিক্রির উদ্যেশ্যে অন্য একজন ব্যক্তি সেই দোলনার ছবি চুরি করে নিজের কাজ বলে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে প্রচার করে আসছিল। যা আমার দৃষ্টি গোচর হলে ভীষণ খারাপ এবং কাজের মাঝে বাধা মনে হলো।
এবং প্রতিবাধ করলে উল্টো আমাকে নানান হুমকি দিয়ে পরে আবার নিজেই ক্ষমা চেয়ে মিমাংসা করে নিল।
এছাড়া তেমন কোন বাধা আসেনি কাজে।
৬. রাষ্ট্র কর্তৃক কি কি সুবিধা প্রত্যাশা করেন।
এই বিষয়ে বলতে চাই, সহজ শর্তে ক্ষুদ্র উদ্যোগতাদের ঋন দেওয়া।
কোন উদ্যোগতা বা বিক্রতার দ্বারা কাষ্টমার যেমন ক্ষতি না হয় তেমনি কাষ্টমার দ্বারাও যেন কোন বিক্রেতার অর্থ আত্বসাৎ হলে প্রাথমিক প্রমানেই যেন
আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
এবং বিভিন্ন দিবস বা সময়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি বা দেশিয় পন্য উৎপাদন কারি উদ্যোগতাদের পন্য প্রদর্শনে সরকারি ভাবে সহায়তা করা।
৭. উদ্যোক্তা হিসেবে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতা
উ: যারা আমাক চিনে বা সোস্যাল মিড়িয়াতে আমার কাজ দেখেছে আমার থেকে কাজটাই পাধান্য দিয়ে থাকে।
এজন্য অনেকে দোলনাওয়ালা নামে ডাকে।
তবে মজার বিষয় এটা ভালোও লাগে।
৮.শুরু ও বর্তমান পুঁজি কতো?
উ: শুরুতে ১৪৫০ টাকার মত মেটারিয়ালস কিনে ছিলাম।
৯. কতো টাকার দোলনা এ পর্যন্ত বিক্রি করেছেন।
উ: তিন লক্ষ দুই হাজার একশত টাকার।
১০. ব্যাংক ঋণের প্রয়োজনীয়তা আছে কি?
উ: যে কোন ব্যবসা বা উদ্যোগ বাড়াতে অবশ্যই মুলধন প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋনের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই আছে।
১১. আপনার এমন উদ্যোগে প্রত্যক্ষ সহযোগীতা কার কাছ থেকে পেয়েছেন?
উ: আসলে এই বিষয়ে বলতে হয় আমার স্ত্রীর কথা।
১২. ফেসবুকে আপনার পেইজের নাম কি?
উ: দোলনা বাড়ি.Hammock.
১৩. আপনার দোলনা কাষ্টমারকে কতটা আকৃষ্ট করে?
উ: অনলাইনে এমন অনেকেই আছে যারা দোলনা সেল করে, তবে তারা তৈরি করেনা।
কিন্ত আমি নিজে তৈরি করি, এতে ক্রেতা তার মনের চাহিদা মতামত সরাসরি আমাকে জানাতে পারে।
দোলনা তৈরি হলে নিজেই ঢাকা শহরে ক্রেতার বাসায় দিয়ে আসি। এবং যা দেখে তারা অর্ডার করে তাদের হুবহুব তৈরি করে দিই।
এজন্য তারা বেশী আকৃষ্ট হয়।
১৪. কোন পেশা,কোন বয়স বা কোন ক্যাটাগরীর মানুষ আপনার দোলনা ক্রয় করে এবং দোলনা ক্রয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন?
উ: দোলনা একটি শৌখিন পন্য। আর শৌখিনতা সব মানুষই করতে চায়, তা ধনী গরিব সবাই।
তবে হ্যাঁ শৌখিন মানুষদের মাঝে যাদের বয়স ২০ থেকে শুরু করে ৪৫/৫০ বছর বয়স, এমন ক্যাটাগরির ব্যক্তিরাই দোলনা বেশি ক্রয় করে। এবং নারী সংখ্যা বেশি।
১৫. আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?
উ: একটি দোলনা কারখানা চালু করে মানুষের দোলনা চড়ার শখ পুরণ, সেই সাথে কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা করা।
১৬. এমন কাজ করে আপনার কেমন লাগে?
উ: এই দোলনা কিন্তু বাহিরের দেশে খুব প্রচলিত, এটা ভেবে ভালো লাগে আমার দেশের মানুষ তা এখন ব্যবহার করছে, আমি তাদের শখ মেটাচ্ছি,
ধন্যবাদ।