বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:১৪ অপরাহ্ন
নোটিশ :
বাংলাদেশের মুখপত্রে আপনাকে স্বাগতম।

শেয়ারিং পদ্ধতি প্রবর্তনের মাধ্যমেই বীমা খাতে কমিশন রোধ সম্ভব

বাংলাদেশের মুখপত্র ডেস্ক :
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২২

আদম মালেক : অতিরিক্ত কমিশনে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বীমা খাত। এই কমিশন বন্ধে নানাজন নানা কথা বলে। উপায় উদ্ভাবনেও অনেক জল্পনা কল্পনা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। তবে শেয়ারিং পদ্ধতি প্রবর্তন হলেই কমিশন প্রতিরোধ সম্ভব বলে মনে করেন সাধারণ বীমা খাতের প্রতিষ্ঠান সিকদার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডর মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আবদুর রফিক।

২০২১ সালের শেষের দিকে সিকদার ইন্স্যুরেন্সে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেন শেখ আবদুর রফিক। সম্প্রতি কথা হয় তাঁর সঙ্গে। বীমা খাতের সমস্যা সম্ভাবনা সংকট উত্তরণের উপায়সহ সিকদার ইন্স্যুরেন্সের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে কথা হয় অনলাইন পত্রিকা বাংলাদেশেরমুখপত্রডটকমের সঙ্গে।

অতিরিক্ত কমিশন প্রসঙ্গে শেখ আবদুর রফিক বলেন, অতিরিক্ত কমিশন বীমা খাতে একটি বড় সমস্যা। শুধু বীমা নয় যে কোনো ব্যবসায় ওপেন মার্কেট থাকলে কমিশন তারা দেবেই। যেমন যে কোম্পানী ঢেউ টিন বিক্রি করে তারাও কমিশন দেয়। কমিশন অতীতে ছিল বর্তমানে আছে ভবিষ্যতেও থাকবে। কমিশন রদ করতে হলে শেয়ারিং সিস্টেমে ব্যবসা করতে হবে। যেমন শেয়ারিং সিসেটমে ১ লাখ টাকার একটা প্রিমিয়াম আসলে গ্রæপ লিডার হিসেবে এই প্রিমিয়ামের ৩০ শতাংশ আমরা রাখলাম বাকী ৭০ শতাংশ ৪৫টি কোম্পানীর মধ্যে ভাগ করে দিলাম। এই শেয়ারিং পদ্ধতিতেই কমিশন রোধ করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে বীমা কোম্পানী স্বাস্থ্যবান হবে। প্রিমিয়াম বাবদ বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা আসলে কমিশন বাবদ যদি অর্ধেক চলে যায় তাহলে থাকে ২৫শ কোটি টাকা । ঐ ৫ হাজার কোটি টাকা যদি ৪৬ টি কোম্পানীর মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয় তখন কোম্পানী স্বাস্থ্যবান হতে সময় লাগবে না।

তিনি বলেন,আমি সাধারণ বীমা ও জীবন বীমা বোর্ডের পরিচালক ছিলাম। শেয়ারিং পদ্ধতিতে কেউ রাজী বলে আমার মনে হয় না। তবে শেয়ারিং পদ্ধতি বাস্তবায়ন ছাড়া কমিশন রোধের বিকল্প নেই। শুধু কমিশন বন্ধ হলে আমাদের ব্যবস্থাপনাও সুন্দর ও উন্নত হবে। কমিশন বন্ধ হলে অনিয়মও বন্ধ হবে। এখানে নয়ছয়ের কোনো সুযোগ নেই।

তাঁর সঙ্গে কথা হয় কোভিডের কুপ্রভাব নিয়ে। তিনি বলেন, সব সেক্টরের মতো বীমাও কোভিড আক্রমণের বাইরে নয়। বীমার জন্য কর্মীদের মানুষের কাছে যেতে হয়। তারা মানুষের সুরক্ষার জন্য কাজ করে। অথচ নিজেরাই অরক্ষিত। করোনাকালে মারা গেছে অনেক কর্মী । তাদের খবর কেউ রাখে না। সব সেক্টরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন ভাতা পায় কিন্তু এই সেক্টরে যারা মার্কেটিংয়ে আছে তারা কাজ না করলে বেতন পায় না। অন্যান্য খাতে প্রণোদনা এসেছে কিন্তু বীমাখাত কোনো প্রণোদনা পায়নি। তাই অনেক বীমা কর্মী মানবেতর জীবন যাপন করছে। করোনাকালে প্রণোদনা না পাওয়া ইন্স্যুরেন্সের জন্য বড় ক্ষতি। আর এজন্য আমাদের তরফ থেকে কোনো আবেদন নিবেদন অভিযোগ আপিলও ছিলনা নিরবে নিভৃতে সকলে সহ্য করেছে সকল যন্ত্রণা।

কোম্পানীগুলোর বীমা দাবি পরিশোধ নিয়েও তাঁর উদার দৃষ্টিভঙ্গি। এই বীমা ব্যক্তিত্ব মনে করেন, কোনো কোম্পানীই বীমা দাবি পরিশোধে অনাগ্রহী নয়। যে যেভাবে পারে বীমা দাবি পরিশোধ করতে চায়। মার্কেটে একটা গুজব আছে, বীমা কোম্পানী দাবি পরিশোধ করে না। আসলে এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা। একটা লোক গাড়ি দুর্ঘটনার জন্য বীমা করে কিন্তু গড়িটি চুরি হয়। গাড়ি চুরি হলেতো কোম্পানী কোনো ক্ষতি পূরণ করবে না। তখনই মার্কেটে রটে যায় বীমা কোম্পানী টাকা দেয়নি। এই নেতিবাচক প্রচারণা থেকে সকলকে বেরিয়ে আসতে হবে।

বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর বীমা তহবিল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন সিকদার ইন্স্যুরেন্সের এই মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো পর্যপ্ত ঋণ দেয়। ব্র্যাক ব্যাংক কর্মসংস্থান ব্যাংক ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকসহ সকল বিশেষায়িত ব্যাংকই বীমা তহবিল গঠন করে। এটা কতটুকু আইনসংগত তা আমার জানা নেই। এ প্রিমিয়ার বীমা খাতে এলে বীমা খাত আরও বড় হতো। এখন এ বিশাল অংকের প্রিমিয়াম থেকে বীমা কোম্পানী বঞ্চিত হয়। এ ব্যাংকগুলো বাইরে বিনিয়োগ করে আমরা তা পারি না।

পণ্য বৈচিত্রের গুরুত্ব সম্পর্কে শেখ আবদুর রফিক গুরুত্বপূর্ণ মতামত দেন। তাঁর দাবি, বীমা খাতকে আকর্ষণীয় করতে হলে নতুন নতুন পণ্য আনতে হবে। বিশেষ করে সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা, কৃষি বীমার মতো সেবা নিয়ে আসতে হবে। এসব বীমা পণ্য জনপ্রিয় করতে পারলে সুফল পাওয়া যাবে। কৃষি বীমার মধ্যে আরেকটি দিক রয়েছে সেটি হচ্ছে গৃহপালিত পশুর জন্য বীমা। কেউ কেউ এ ধরনের বীমা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এগুলো যদি জনপ্রিয়তা পায়, তাহলে দেশের বীমা খাতের চেহারা বদলে যাবে। সিকদার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী চায়, বাজারে নতুন নতুন বীমা পণ্য আসবে, গ্রাহক আরো আকৃষ্ট হবে দেশের বীমা ব্যবস্থার প্রতি।

জীবন বীমার তুলনায় সাধারণ বীমার ব্যবসা না বাড়ার কারণ সম্পর্কে এই বীমা বিশেষজ্ঞর বক্তব্য হলো, সাধারণ বীমা খাতের প্রবৃদ্ধি দেশের সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করে। যত বেশি কারখানা হবে, তত বেশি অগ্নি বীমা হবে। এভিয়েশন খাতের আকার বাড়লে বীমাও বাড়বে। সাধারণী বীমা খাত যে বাড়ছে না তা নয়। তবে জীবন বীমা খাতের বিষয়টি ভিন্ন। ব্যক্তিনির্ভর হওয়ার কারণে জীবন বীমার পলিসি সংখ্যা বেশি হবে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ার কারণেও কিন্তু জীবন বীমার পরিমাণ বাড়ছে। তাছাড়া জীবন বীমার ক্ষেত্রে চাইলেই যেকোনো নতুন পণ্য সহজে চালু করা সম্ভব। কিন্তু সাধারণ বীমার ক্ষেত্রে চাইলেই নতুন পণ্য চালু করা যায় না। সেটি গ্রাহকদের মধ্যে সাড়া জাগাতে পারবে কিনা বা লাভজনক হবে কিনা এ ধরনের অনেক কিছু চিন্তভাবনা করে এখানে নতুন পণ্য চালু করতে হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই জীবন বীমার তুলনায় সাধারণ বীমার ব্যবসা বাড়ার গতি কিছুটা ধীর হবে। তবে জীবন বীমার পরিমাণ বাড়লে পরোক্ষভাবে সেটি কিন্তু সাধারণ বীমার ব্যবসা বাড়াতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

 

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর