নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে নিজেদের প্রস্তাবনাগুলো যথাযথভাবে আমলে না নেওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম)। এনডিএম মহাসচিব মোহাম্মদ মোমিনুল আমিন একটি সুনির্দিষ্ট ও শক্তিশালী নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জোটের প্রতীকে নির্বাচন করার অধিকার ফিরিয়ে আনা, নির্বাচনী আচরণবিধির অবাস্তব ধারাগুলো প্রত্যাহার এবং মাঠ প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।
এনডিএম মহাসচিবের প্রধান আপত্তির বিষয় ছিল তফসিল ঘোষণার পূর্বে সরকারের আনা সংশোধনী, যেখানে জোট করলেও নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। জোট করার মূল উদ্দেশ্যই হলো একটি শক্তিশালী মার্কায় ভোটারদের কাছে পরিষ্কার বার্তা দেওয়া। আইন করে এই অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না। হঠাৎ করে এই পরিবর্তন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী কৌশল ও প্রস্তুতিতে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করেছে বলে জানান তিনি।
এনডিএম মহাসচিব মোহাম্মদ মোমিনুল আমিন আচরণবিধির বেশ কয়েকটি ধারায় বাস্তবতার অভাব উল্লেখ করে সেগুলোর সংশোধনী বা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়েছেন।
সমস্যা : তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকে নির্বাচন প্রচার শুরুর পূর্বে ক্যাম্পেইন স্ট্র্যাটেজি (নির্বাচনী পরিকল্পনা) জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা করেছেন। এটা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কাছে কৌশল ফাঁস করে দিতে পারে। যদি শুধু জনসভার তারিখ ও সময় জানানোর উদ্দেশ্য হয়, তবে তা স্পষ্ট করতে হবে। অন্যথায় এই বিধান প্রত্যাহার করতে হবে।
২. অপচনশীল দ্রব্য (৭ এর খ নম্বর দফা)
সমস্যা : প্লাস্টিক বা পিভিসি (PVC) ব্যানার-ফেস্টুন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাপড়ের (স্ক্রিন প্রিন্ট) ব্যানার তৈরির প্রযুক্তি পর্যাপ্ত ও সহজলভ্য নয়। পিভিসি ব্যানারে একমাত্র এভেইলেবল টেকনোলজি। ফিজিবিলিটি স্টাডি ছাড়া এমন বিধান চাপানো উচিত নয় এবং এটি প্রত্যাহার করতে হবে।
৩. যানবাহনের ব্যবহার (সংখ্যার বাইরে)
সমস্যা : নির্বাচনী প্রচারে নৌকা বা মোটরসাইকেল ব্যবহারে বিধিনিষেধ এর বিষয়ে মহাসচিব জানান, বরিশালের মতো নৌকা নির্ভর বা রাজবাড়ীর মতো মোটরসাইকেল নির্ভর এলাকায় প্রার্থীর চলাচলের জন্য স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত যানবাহনের ওপর বিধিনিষেধ রুখতে হবে।
৪. বিলবোর্ডের সংখ্যা (১৪ নম্বর দফা)
সমস্যা : নির্বাচনী প্রচারণায় সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড ব্যবহারের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। একটি নির্বাচনী এলাকায় ২৪টি ইউনিয়ন থাকতে পারে। প্রতি ইউনিয়নে একটি করে বিলবোর্ড দিলেও ২০টি যথেষ্ট নয়। বিলবোর্ডের সংখ্যা বাস্তবতার নিরিখে বাড়াতে হবে।
৫. নির্বাচনী সামগ্রী অপসারণের সময়সীমার বিষয়ে তিনি বলেন, ভোট গ্রহণ সমাপ্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত নির্বাচনী সামগ্রী অপসারণের বাধ্যবাধকতা করেছেন। নির্বাচন পরবর্তী উত্তপ্ত পরিবেশে এত কম সময়ের মধ্যে অপসারণ কোনো প্রার্থীর পক্ষেই সম্ভব নয়। সময়সীমা বৃদ্ধি করতে হবে।
৬. ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ব্যয় : ২০ হাজার টাকার বেশি সব ব্যয় ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে করার বাধ্যবাধকতার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকের শাখা সীমিত এবং চেক প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। এমএফএস (MFS) এখন ব্যাংকিং চ্যানেলের অংশ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। এই বিধানের প্রয়োগের বাস্তবতা বিবেচনা করতে হবে।
মাঠ প্রশাসন : ২০১৪-২০২৪ সাল পর্যন্ত যারা নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের যথাসম্ভব দায়িত্ব থেকে অপসারণ করতে হবে। মাঠ প্রশাসনকে রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থায় আনতে হবে।
গণভোটের ব্যবস্থাপনা : গণভোটের জন্য পর্যাপ্ত প্রচারণার ব্যবস্থা করতে হবে। কাউন্টিংয়ের জটিলতা এড়াতে ভোটকক্ষে কক্ষের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং গণভোট কাউন্টের জন্য আলাদা কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে।
ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ (১৪.২, ১৪.৩, ১৪.৪) : নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মকর্তা নিয়োগে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের আশঙ্কা থাকায়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তা তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে জানাতে হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশন : তিনি যেন ‘সুপারচিফ এডভাইজারের’ ভূমিকা না নিয়ে, একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে দৃঢ় ভূমিকা রাখেন, সেই অনুরোধ করা হয়।







